জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেনের উদ্যােগে রামুতে জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা বিষয়ক একটি সংলাপ ও ওরিয়েন্টেশন সেশনের আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে ২০ জন স্থানীয় সাংবাদিক (অনলাইন, সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং রেডিও), স্থানীয় এনজিও জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা, ইউএন উইমেন কক্সবাজার সাব-অফিসের প্রতিনিধি এবং রামুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অংশ নেন।
১৬ মার্চ (মঙ্গলবার) উপজেলা পরিষদের হলরুমে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য ছিল গণমাধ্যমে নারী ও পুরুষের ভারসাম্য রক্ষা, নারীকে সংবেদনশীল ভাবে উপস্থাপন, নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক প্রতিবেদনে সংবেদনশীল শব্দের ব্যবহার এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস সম্পর্কে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাম্যক ধারণা দেওয়া। এছাড়াও গণমাধ্যমে সংবাদ এবং অনুষ্ঠানে নারীপুরুষের ভারসাম্যমুলক উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে কক্সবাজারের ইউএন উইমেন সাব—অফিসের প্রধান ফ্লোরা ম্যাকুলা সাংবাদিকদের প্রতিবেদনে এবং গণমাধ্যমে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি নারীদের ভিকটিম হিসেবে না দেখিয়ে রোল মডেল হিসাবে উপস্থাপনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করন এবং সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে নারীকে সংবেদনশীলভাবে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, জেন্ডার সংবেদনশীল প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকদের সক্রিয় ভূমিকা ক্ষতিকর সামাজিক নিয়মরোধে এবং নারীদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রামু উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) প্রণয় চাকমা সাংবাদিকদের জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতার পক্ষে তাদের সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের প্রকাশ্যে প্রচারের চাইতে তাদের সুরক্ষার বিষয়ে নজর দিতে বলেন। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পন। অসংবেদনশীল রিপোর্টিংয়ের প্রভাবে কীভাবে ভুক্তভোগী দ্বিগুণ নির্যাতনের অভিজ্ঞতা পান ব্যাখ্যা করেন এবং এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি সাংবাদিকদের অন্তর্দৃষ্টি ব্যবহার করে ,গবেষণা, সঠিক তথ্য এবং উপাত্তের উপর ভিত্তি করে রিপোর্ট করতে আনুরোধ করেন।
জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শিউলি শর্মা গবেষণা ভিত্তিক সাংবাদিকতার উপর জোর দেন। তিনি সংবাদ প্রচার ও রিপোর্টিংয়ের সময় সাংবাদিকদের মুল-ঘটনার পাশাপাশি অপ্রসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে রিপোর্ট না করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি ভিকটিমদের সুরক্ষার জন্য সাংবাদিকদের সক্রিয় ভুমিকা অবলম্বনের জন্য আহ্বান জানান। বিশ্বে নারীর প্রতিভার স্বীকৃতি, শান্তিপূর্ণ এবং সমতার বিশ্ব তৈরিতে সাংবাদিকরা যে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ওরিয়েন্টেশন সেশনে, ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি নাদিরা ইসলাম ও মাহমুদুল করিম জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা এবং প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে জেন্ডার সংবেদনশীলতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সংলাপ অধিবেশনে সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে সংবেদনশীল সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন এবং গণমাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতা চর্চার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। সাংবাদিকগণ এধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এ বিষয়ে ট্রেনিংয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ইউএন উইমেনকে এ বিষয়ে নিয়মিত ট্রেনিং এবং আলোচনা সভা আয়োজনের অনুরোধ করেন।