হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌরসভা প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও নেই কোনো নিজস্ব পৌরভবন। ১৫ বছর ধরে উপজেলা পরিষদের পরিত্যক্ত আদালত ভবনে পৌরসভার কার্যক্রম চলছে।
২০০৫ সালে চুনারুঘাট পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে খ্যাত চুনারুঘাট পৌরসভা বিএনপির মেয়রদের দখলে। সরকার আওয়ামী লীগের, কিন্তু মেয়র বিরোধী দলের- এমন অবস্থার কারণে ১৫ বছরেরও আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি এই পৌরসভার বলে মন্তব্য নানা মহলের। উন্নয়ন সভা-সেমিনার ও কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। ফলে দৈনন্দিন ভোগান্তি নিয়ে জীবনযাপন করছে পৌরবাসী।
পৌরশহরে যানজট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত সড়ক বাতি, যত্রতত্র পৌরসভার ময়লা-আর্বজনা ফেলাসহ পৌরসভার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক। পৌরসভার ৫০ ভাগ রাস্তা এখনও রয়েছে কাঁচা। এ অবস্থায় আবারও পৌর নির্বাচন। পাওয়া না পাওয়া নিয়ে পৌরবাসীর মনে নানা প্রশ্ন।
নাগরিকদের নানা প্রশ্ন ও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মরা খোয়াই নদীর ব্রিজের দু’পাড়ে ময়লা-আবর্জনা স্তুপ হয়ে পড়ে আছে। আবার ময়লার স্তুপে আগুন দেয়ার ফলে ধোঁয়ায় চুনারুঘাট পৌরশহর ভয়াবহ মাত্রার বায়ুদূষণে পড়েছে। প্রতিদিন খোয়াই নদীর দুটি ব্রিজ দিয়ে চুনারুঘাট উপজেলার পূর্বাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পৌরশহরে প্রবেশ করে। নদীর পাশে দক্ষিণা চরণ পইলট হাই স্কুলের শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা এ সড়কেই আসা যাওয়া করে। অথচ এই দুটি ব্রিজের গোড়ায় রাস্তার পাড়ে টনের পর টন ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। অভিযোগ করলেও এব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চুনারুঘাট পৌরসভা এলাকার ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ভাগাড় ও ময়লা পরিবহনের জন্য দুটি গাড়ি থাকলেও শুধুমাত্র পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির দরুণ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধুমাত্র গাড়ির তেল আর শ্রমিকে টাকা বাঁচাতেই পৌর কর্তৃপক্ষের টালবাহানা।
এদিকে, কাঁচা বাজার ও মাছ বাজার রয়ে গেছে সেই বৃটিশ আমলের। রাস্তার ওপর মাছ ও কাঁচা বাজার বসার ফলে এ বাজারে আসা ক্রেতাদের পড়তে হয় ভূগান্তিতে। নেই গণশৌচাগার। বিনোদনের জন্য কোন র্পাক। রাস্তার পাশে, ড্রেনের উপর দোকানপাট বসায় রাস্তায় চলাচলে জনসাধারণের দুর্ভোগ। নেই র্নিদিষ্ট স্থানে গাড়ী রাখার পৌরসভার স্ট্যান্ড। তবুও মহাসড়কে পৌরসভার নামে যানবাহন থেকে চাঁদা তোলা হয়।
এবার আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাইফুল আলম রুবেল বলেন, গত এক দশক ধরে চুনারুঘাট পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। গোটা দেশে উন্নয়ন হলেও চুনারুঘাট পৌরসভার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। পিছিয়ে পড়া এ পৌরসভাকে নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে তরুণদের সাথে নিয়ে চুনারুঘাটকে আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
বর্তমান মেয়র ও বিএনপি থেকে মনোনিত প্রার্থী নাজিম উদ্দিন সামসু বলেন, আমি চুনারুঘাট পৌরসভাকে একটি আধুনিক প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলেছি। ৭০ ভাগ রাস্তা পাকা করেছি। আধুনিক সড়কবাতি সংযোগ করেছি। চুনারুঘাট মধ্যবাজারে গোলচত্বর করেছি। ফলে যানযট অনেকটা কমেছে। আমি আবার নির্বাচিত হলে আমার চলমান কাজগুলো সমাপ্ত করব। চুনারুঘাট পৌরসভাকে আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলব।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি চুনারুঘাট পৌরসভার নির্বাচন। মেয়র পদে ৩ জন, সংরক্ষিত আসনে ১১ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৪১ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।